31 C
Dhaka
শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০২৫
একুশে ৭১রাজনীতিআব্দুল আজিজ তালুকদার : সময়ের সাহসী যোদ্ধা

আব্দুল আজিজ তালুকদার : সময়ের সাহসী যোদ্ধা

সফেদ বসনে হেঁটে যাওয়া সংগ্রামের মানুষ আবদুল আজিজ তালুকদার জন্মেছিলেন তৎকালীন নেত্রকোনা মহকুমা বর্তমান জেলার পূর্বধলা থানার বৈরাটী ইউনিয়নের দিননগর গ্রামে ১৯৩৩সনের ১ মার্চ।মা :আখের বানু, পিতা : হসমত উদ্দিন সরকার।

শ্যামগঞ্জ স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন। কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে আই,এস,সি। এ কলেজ থেকে বি,এ পাশ করেন। আই,এস,সি পড়াকালীন সময়ে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৫২ সনে ঢাকায় যখন ছাত্রদের উপর গুলি হয়, কিশোরগঞ্জে ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিল চলছে। বি,এ ক্লাশের ছাত্র আবদুল আজিজ তালুকদার এতে সম্পৃক্ত হন।গোটা সময়ে তিনি আন্দোলনে যুক্ত থাকেন। তাঁর রাজনীতির সম্পৃক্ততা অনেকটাই, কিশোরগঞ্জ থেকে। ১৯৫৩ সনে তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য হন।

এরপর তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। অনেক স্কুলে তিনি শিক্ষক ছিলেন। বৈখের হাটি,জারিয়া, শ্যামগঞ্জ,বাইঞ্জা,মদনপুর উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। সবশেষে ময়মনসিংহ শহরের রাধাসুন্দরী গার্লস স্কুল থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগ, তিনি রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। ন্যাপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন তিনি। নেত্রকোনায় আজিজুল ইসলাম খান, ওয়াজেদ আলী খান,এড,আবদুল আহাদ খান,আবদুল খালেক, আবদুল গণি তারা মিয়া,আবদুল মান্নান চৌধুরী, বিপ্লব বিশ্বাস, মৃণাল বিশ্বাস, আব্দুল মোতালেব সুরুজ মিয়ার সাথে রাজনীতি করেন। নেত্রকোনাতে রাজনীতি করার সময় কমরেড মনি সিংহ,অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, চৌধুরী হারুনর রশীদ,মতিয়া চৌধুরী, পংকজ ভট্টাচার্য, অজয় রায়,হেনা দাস বারীন দত্ত,কাজী বারী প্রমুখ রাজনীতিবিদের সাথে ঘনিষ্ট হন। প্রচার বিমুখ আবদুল আজিজ তালুকদার সবসময় নিরব কর্মী হয়ে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন সে সময়।

১৯৬০ সনে তিনি গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। প্রকাশ্যে কাজ করেন ন্যাপে।১৯৭০ সনে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে কুঁড়েঘর প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তখন পুর্বধলা সহ গোটা অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। নিরব থেকে সময়ের প্রয়োজনে সরব হয়ে উঠেন। ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন।

১৯৭১ সনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তাঁর বাড়ি ছিলো ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি -ছাত্র ইউনিয়নের যোদ্ধাদের ট্রানজিট ক্যাম্প। এক ঝাঁক তরুণ দের তিনি মুক্তি যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে দেশের খবরাখবর পাঠানো এবং আনানোর গোপনীয় কাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আইয়ুব খানের কঠোর সামরিক শাসনামলে অনেক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হুলিয়া নিয়ে এই বাড়িতে আত্মগোপনে থেকেছেন।

স্বাধীনতাত্তোর কালে গণসংঠনগত ভাবে তিনি কৃষক ও শিক্ষক আন্দোলনে জড়িত হন। একসময় তিনি শিক্ষক আন্দোলনে আঞ্চলিক দায়িত্ব পালন করেছেন। ময়মনসিংহ জেলার কৃষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। রাধাসুন্দরী স্কুলের শিক্ষক থাকার সময়ে তিনি শিক্ষক সংগঠনের নিয়মিত কাজে যুক্ত হন। শিক্ষক নেতা মোমতাজ উদ্দিন, দুকুল চন্দ্র দের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯৩ সনে আদর্শ পরিত্যাগ করে, কমিউনিস্ট পার্টিকে বিলোপ করে দেওয়ার জন্য একদল বিলোপবাদী তাদের কর্মকাণ্ড চালায়। ময়মনসিংহেও এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়। পার্টিকে রক্ষা করার জন্য নবতর সংগ্রাম চলে। তখন আবদুল আজিজ তালুকদার পার্টি রক্ষায় এগিয়ে আসেন। পার্টির গোপন সদস্য, সময়ের প্রয়োজনে সরব হয়ে উঠেন। পার্টির জেলা কমিটিতে যুক্ত হন। ময়মনসিংহ জেলা কমিটির পুনর্গঠিত পার্টিতে সভাপতি হন। ১৯৯৩ সন থেকে ২০১৬। একটানা ২৩ বছর সিপিবি ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।ময়মনসিংহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পার্টি গঠনে অসামান্য অবদান রেখেছেন। খুলনায় অনুষ্ঠিত কৃষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন। পার্টির শৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ়চেতা। নিষ্টাবান বিপ্লবী। পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি, গোছানো মানুষ।ব্যক্তি জীবনে ক্রীড়ামোদী, অতিথি পরায়ণ। বই পড়তে ভালবাসেন। গোটা গোটা অক্ষরে সুন্দর হাতের লেখা,মুগ্ধ করে। ইংরেজি পড়ান।ভাষা, সাহিত্য,ব্যাকরণ বিষয়ে, গভীর জ্ঞান তাঁর। পার্টির গঠনতন্ত্রের বাধ্য বাধকতায় দায়িত্ব থেকে নিজে সরে যান। এখনো কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার হিসেবে দায়িত্বে আছেন,শিক্ষক শাখায়।

স্ত্রী, রেজিয়া খাতুনের পিতার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুরের বাঁশতলা গ্রামে । নিভৃতে আবদুল আজিজ তালুকদারএবং তাঁর রাজনীতিকে সহায়তায় করছেন। তাঁর ৩ কন্যা, ৩ পুত্র। ৯,নাতি নাত্নি।দুই কন্যা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। মনিরা বেগম অণু, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। নাদিরা বেগম, উদীচী নেত্রী, পার্টির নারী শাখার সদস্য। শবনম আজিজ, কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির অনুসারী। অন্য সবাই রফিকুল ইসলাম পাবলো, রেজাউল ইসলাম দিপু, শফিকুল ইসলাম শফি, কমরেড আব্দুল আজিজ তালুকদারের আদর্শকে সম্মান করেন।আজিজ তালুকদারের ছোট ভাই আবদুল হাদী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ করেছেন, তিনি কমিউনিস্ট রাজনীতিকে ধারণ করেন। আবদুল আজিজ তালুকদারের বয়স নব্বই। শারীরিক কারণে তিনি নিয়মিত নন,কিন্তু মানসিক ভাবে পুরোমাত্রায় সক্রিয় একজন মানুষ। কারণ তিনি আদর্শে, মন মেজাজে একজন দেশপ্রেমিক বিপ্লবী রাজনীতিবিদ।

জন্মদিনে বিপ্লবী শুভেচ্ছা, শুভ জন্মদিন,কমরেড। আমরা আপনাকে ভালবাসি। ভালো থাকবেন।

লেখক- কমরেড অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, সভাপতি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ময়মনসিংহ জেলা কমিটি ও সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি।

আরও পডুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

nineteen − 2 =

- Advertisment -spot_img

সবচেয়ে পঠিত