31 C
Dhaka
শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০২৫

” আহ্বাণ “

।। জহিরুল আলম জাহাঙ্গীর।।

হে মোর অনাগত কান্ডারী –
আর কত?কত আর গুনবো প্রহর তোমার প্রতিক্ষায়।
ডাষ্টবিনের ধারে, রেল সড়কের খাদের পাড়ে
বস্তির ঝুপড়িতে কিংবা নিষিদ্ধ গলির অন্ধকুঠুরীতে
পথছেয়ে উন্মুখ ভুখা-নাঙা মানুষগুলো
তোমারই আগমনি শঙ্খ সুর-ধ্বণির প্রত্যাশায়।
হে মোর অনাগত কান্ডারী,
একাত্তরে একবার তুমি এসেছিলে যদিও
কিন্তুু অকস্মাৎ রণ ক্ষান্ত করে অসমাপ্ত রেখেই চলে গেলে,
তাই মীরজাফর, জগৎশেঠ আর উমিচাঁদেরা
রয়েই গেল এবং এখনও আছে।
একনদী রক্ত পেরিয়ে কি পেলাম?
লাল সবুজে বর্ণিল একটি পতাকা ছাড়া।
রাজনীতির পট পরিবর্তনে শাসক বদলায়,
সংশোধনীর নামে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত হয়,
জয় বাংলার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত মুক্তি সেনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তে সিক্ত পতাকা উড়ায়
যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীরা।
বারবার শাসনের নামে ছলে শোষণের যন্ত্রটাকে ওভারহোলিং করে
সুবিধাবাদীর দল নব উদ্যোমে মেতে উঠে
লুটপাট ও দূর্ণীতির মহোৎসবে।
অথচ খেটে খাওয়া দিনমজুর মেহনতী মানুষেরা
রয়ে গেল আগের মতই।
অশ্বত্থের ছায়ায় রাখালের বাঁশরিটা
সে-ই যে থেমেছিল আর বাজেনি আজও,
ভুখা-নাঙা মানুষের মিছিলটা থামেনি এখনও।
হে মোর অনাগত কান্ডারী –
তাই তুমি এসো, আবারও এসো-
সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে
ঘুচিয়ে দিতে দুর্নীতি আর দুঃশাসনের প্রগাঢ় অন্ধকার।
রাজাকার, আল-বদর,আল-শামসদের
অভিনব শাসন,শোষণ প্রক্রিয়ার হোক অবসান।
সত্য,সুন্দর, সমতার সমন্বয় সাধনে এসো-
এসো হে মোর অনাগত কান্ডারী।
হে মোর অনাগত কান্ডারী –
আবাবিলের ঠোঁটে থাকা ক্ষুদ্র নুড়ি নিক্ষেপে যেমন
ধুলিস্মাৎ হয়েছিল আব্রাহার বিশাল হস্তীবহর,
যেমন করে বার্নিল প্রাচীর হল ভুলুন্ঠিত আজ,
তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে পড়েছে রক্ত বীজ,
চসেস্কো এলিনার স্বপ্নসৌধ ভেঙ্গে হল ছারখার,
আর সশস্ত্র বিপ্লবের আগুন লেগেছে নগুর্ন কারাবাকে।
তেমনি করেই জ্বলে উঠোক অগ্নিশিখা
দাউদাউ আগুনের লেলিহান প্রচন্ডতায়
পুড়ে পুড়ে খসে পড়ুক লুটেরাদের আকাশছোঁয়া অট্টালিকাগুলো।
হে মোর অনাগত কান্ডারী –
তুমি এসো বরফগলা নদীর স্বচ্ছ প্রবাহের মত অথবা
বাঁধনহারা ঝর্নাধারার উচ্ছল দুরন্ত গতিতে।
তুমি এসো কালবোশেখীর মহা-হুংকারে
মত্ত হস্তীর মত পদতলে পিষ্ট করে দিতে বিলাসী কবির সখের স্বর্গোদ্যান,
যেখানে নেই ক্ষত-বিক্ষত বুলবুলের সাদর আমন্ত্রণ।
তুমি এসো দ্রুবতারার মত তিমির বিনাশী জ্যোতি হয়ে।
এসো ইয়াছির আরাফাতের মত বজ্র-কঠিণ দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে।
তুমি এসো খালেদের শের মারা শমসের কিংবা
শের-ই খোদার সেই জুলফিকার হাতে।
তোমার পবিত্রতায় শানিত তরবারির আঘাতে
খন্ডিত দ্বি-খন্ডিত হোক ক্ষমতা লোলুপ সাম্যদ্রোহীর দল।
হে মোর অনাগত কান্ডারী –
তুমি এসো মৃত্যুর জীয়নকাঠি হাতে,
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে,উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে,সত্তরের গণ-প্লাবণে,একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামে আর-
পচাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে
স্বপরিবারে নিহত মহাণ জাতির জনক শেখ মুজিবসহ
সকল অতৃপ্ত শহীদানদের স্বপ্ন পুরণের অঈীকার নিয়ে
আরেকবার মহা-সংগ্রামের মহানায়ক হয়ে।
হে মোর অনাগত কান্ডারী –
এসো তুমি গোলকধামের মহা-বিষ্ণুর নাভি পদ্মমুল ছিড়ে সুদর্শন চক্র সাথে-
কপিলা বস্তুর রাজ উদ্যানে প্রস্ফুটিত পুষ্প কলি হাতে কিংবা
শুভ্র মেঘের ভেলায় অথবা বোররাকে চড়ে,
এসো মেষের রাখাল শ্বাশত আশীর্বাণী নিয়ে দূর্গত মানবের ঘরে।
ককেশাসের লৌহ -প্রাচীর ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে
জুলকার নাইনের কুখ্যাত বন্দীরা,
লক্ষ যুগের বুভুক্ষু, বিভৎস,অভিশপ্ত
ইয়াজুজ-মাজুজ এর দল লোলুপ রসনায়
গ্রাস করেছে পৃথিবীকে এক উন্মত্ত আক্রোশে।
তাই তুমি এসো বিষুবিয়াসের জ্বলন্ত অগ্নি সিন্ধু আর
হিরোশিমার প্রচন্ডতা নিয়ে।
খানে দাজ্জালের মিথ্যা স্বর্গ ধংশকারী
তুমি এসো চির সত্যের আলোকবর্তীকা হাতে
প্রতিক্ষিত সর্বশেষ ত্রাণ- কর্তা ইমাম মেহেদী হয়ে।
এসো!এসো!!আর কতদূর!!!
কত আর গুনবো প্রহর তোমার প্রতিক্ষায়?
হে মোর অনাগত কান্ডারী –
তোমারই সৈনিক হতে বড় সাধ মোর।
আজি এ দুর্দিনে তোমারেই মনেপড়ে,
বারবার শতবার তোমারই বন্দনা করি-
এসো, এসো হে মোর অনাগত কান্ডারী।

আরও পডুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

12 − four =

- Advertisment -spot_img

সবচেয়ে পঠিত