খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন খোলা বাজার থেকে চাল কিনে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা যাবে না । বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করে প্যাকেট করতে দেবো না। আমাদের এই ম্যাসেজটা বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হয়েছে। খুচরা কিনে তারা প্যাকেট করতে পারবে না। মিল মালিকরা নিজস্ব প্রডাকশন বিক্রি করতে পারবেন।
১লা জুন (বুধবার) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে চালের মূল্য বাড়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বাজারে চালের হঠাৎ মূল্য বাড়ার জন্য বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমরা চিন্তা করছি যে এই সার্কুলার জারি করা যায় কিনা। যারা প্যাকেট করে চাল বিক্রি করবে তারা দেশের বাজার থেকে কিনতে পারবে না। তারা ৬৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আমদানি করে প্যাকেট করবে। এটা আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের সচিব নেই। তিনি ৮ জুন কাজে যোগ দেবেন। আমরা এটার সামারি রেডি করছি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানোর জন্য। এটা কৃষি সচিব, খাদ্য সচিব, বাণিজ্য সচিব ও শিল্প সচিব এরা চারজন মিলে একটি মিটিং করবে ভোক্তা অধিকারকে নিয়ে, ওয়ে বের করার জন্য। এটা এখনও ফাইনাল হয়নি। তাদের যদি নিজস্ব মিল থাকে তারা সেখানে প্যাকেট করতে পারবে।
তিনি বলেন, নিজস্ব মিল থাকলেও লাইসেন্সে যে মজুদের বিধান আছে তার বাহিরে মজুদ করতে পারবে না। মিলের যে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা তার তিনগুণ তিনি মজুদ করতে পারবেন। এটা হলো রোলিং। এর বাহিরে থাকলে সেটা অবৈধ মজুদ। এটাই আমরা স্কয়ারে পেয়েছি, পাঁচ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত। এর বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
সরকারকে করপোরেট ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন খাদ্যমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার কোনো ফাঁদে পড়েনি। ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করছিল, আমরা রিকভার করছি।
সোমবার চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দেশের দুই স্থানে অবৈধ চাল মজুদের তথ্য পাওয়ার কথাও জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন জেলায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি। দিনাজপুরের একটি গোডাউনে একটি মিলও আছে, সেই মিলের যে পাক্ষিক ক্ষমতা দেওয়া আছে তার তিনগুণ সর্বোচ্চ তারা মজুদ করতে পারবে। একটি বাজারে যাবে একটি উৎপাদনে যাবে আরেকটি মজুদ থাকবে। সেটার পরেও প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত ছিল। এটাকে সিলগালা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে চাল ৬০ টাকা ৬৫ টাকা পর্তা পড়ছে সেটা প্যকেটজাত করে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করছে। একই সঙ্গে আগাম টাকা মিলারদের দিয়ে আসছে এমনকি তাদের প্যাকেটও দিয়ে আসছে সেখানে নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া ইত্যাদি স্থানে। আমরা সেগুলোও বন্ধ করেছি। যেমন মহাদেবপুরে দুটো মিল ভাড়া নিয়েছে। ভাড়া যদি তারা নিয়ে থাকে তাহলে ভাড়ার যে মিলটি আছে সে মিলের ব্র্যান্ডেই কিন্তু চাল বস্তায় ভরতে হবে। সেখানে গিয়ে বস্তা পাওয়া গেছে, এটা আমরা জব্দ করেছি।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দিনাজপুরেরও আমরা জব্দ করেছি। এর পাশাপাশি আমাদের বড় বড় মিল মালিকদের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। যারা একেবারেই ধান ব্যবসায়ী নয় তারাও মজুদ করছে, ইটের ভাটাওয়ালাও মজুদ করছে এটাও আমরা খুঁজে পেয়েছি। এমনকি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকও চাল কিনে মজুদ করছেন।
ধারাবাহিকভাবে চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র বলেন, প্রত্যেক চালের বাজারে, আড়তে এবং মিলে এমনটি গ্রামাঞ্চলেও কৃষক ছাড়া কেউ যদি ধান কিনে মজুদ রাখে সেখানেও অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে।
বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আসলে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এটা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কৃষি অফিসার, খাদ্য কর্মকর্তা এবং ডিসিসহ এটার প্রকৃত চিত্র নির্ণয় করে কৃষি মন্ত্রণালয় ও আমাদের পাঠানোর জন্য। তাহলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো আদৌও যে ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে তা হয়েছে নাকি এর চেয়ে কম ক্ষতি হয়েছে। আমাদের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক তথ্য না থাকলে তো আমরা এটা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিতে পারবো না। আশা করি সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাবো এবং আমাদের অভিযানও ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে।
চালের ব্যবসায় সম্পৃক্ততা আছেন বলে আপনি (মন্ত্রী) মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা যদি আপনারা বলেন, তাহলে আল্লাহ বেজার হবেন। আপনারা পাপী বলে সাব্যস্ত হবেন। আমি কোনো চালের ব্যবসা করি না, এটা আগেও অনেকবার বলেছি। আমি এটাও বলেছি এই মজুদদারদের মধ্যে দল নির্দল কোনো কিছুই দেখার বিষয় নেই। কারণ মজুদদারদের একটি ভিন্ন দল। আমি তো নির্দেশ দিয়েছি ১৯৭৪ এর স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে মামলা করতে। সেখানে আমাদের ডিসি সাহেবরা একটু ভয় পান। আমি বলেছি এই অ্যাক্টেই মামলা করেন।
চাল সিন্ডিকেটকে শায়েস্তা করতে প্রয়োজনে চাল আমদানি করে দাম স্বাভাবিক করা হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন বলেন, আমরা বোরো কেটেছি, এরপর আউশ আসবে, এটা শেষ করতে করতে আমন আসবে। অতএব আমাদের এখানে অভাব হওয়ার কথা না। যদি আমরা দেখি যে মানুষের খাবারের চালটা বেশি লাগছে তাহলে আমরা আমদানি করবো। ভরা মৌসুমে কোনো সমস্যাই হবে না।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে ক্ষমতাবান নয়। এজন্যই আমরা কাল থেকে শুরু করেছি। এটাও ঠিক নির্বাচনের আগ মুহুর্তে কেউ কেউ তো আছেন যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। আমরা সচেতন আছি। খবর N24