বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে স্বাধীন। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মধ্যম আয়ের দেশ থেকে স্মার্ট রাষ্ট্র গঠনে সফলতার শীর্ষে। বাঙালীর মধ্যে নেই কোনো পরাধীনতার ছিটে ফোঁটা। প্রত্যেক বাঙালী বুক ফুলিয়ে নিজের আত্ম অধিকার আদায়ে সর্ব স্তরে শান্তির নিঃশ্বাস ছড়াতে পারে।কিন্তু বাঙালীর স্বাধীনতা আর আত্ম অধিকার আদায়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাসের পটভূমিকায় যার নামটি চির স্মরনীয় হয়ে আছে তিনি হলেন বাংলার বলিষ্ঠ কণ্ঠের অধিকারী
নির্যাতিত,নিপীড়িত,অবহেলিত অধিকারবাদী গণমানুষের জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাক শাসন আমলের এদেশবাসীকে শোষণের দীর্ঘ ২৩ বছরের ১২ বছর বঙ্গবন্ধু পাক জালিমদের জুলুমতার জাতাঁকলে বন্দি ছিল।অকট্য নির্যাতন,অত্যাচার সহ্য করেছে।তবুও এদেশের মানুষের মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সত্যের পথ হতে একপথ বিছলিত হয় নি।তিনি সর্বদা বিপ্লবের লেলিহান শিখায় জলন্নিত হয়ে অবহেলিত বাঙালীর অধিকার আদায়ে স্বোচ্ছার ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন আত্ম স্বাধীনতা ব্যতীত কোনো জাতি ঠিকে থাকতে পারে না, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন,”আলোক ব্যাতীত যেমন পৃথিবী জাগে না, স্রোত ব্যতীত যেমন নদী ঠিকে না তেমনি স্বাধীনতা ব্যাতীত কোনো জাতি ঠিকে থাকতে পারে না। আর বঙ্গবন্ধু ছিল স্বাধীনতা অর্জনে স্বোচ্ছার। একটা কথা বারবার বঙ্গ জনতার রিদয়ের স্পন্দন থেকে প্রবাহিত হয়, “বাংলার ভূমিতে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ কণ্ঠ উদিত না হলে বাঙালী ঐক্যহীনতার ফলে লাভ করতে পারতো না তাদের প্রাণের স্বাধীনতা।মোরা হতে পারতাম না মুক্ত স্বাধীন দেশের অধিবাসী। পাক জানোয়ারদের জুলুমতার হিংস্র থাবায় দীর্ঘ সময় ধরে অতিবাহিত হতে হতো বাঙালী নিরীহ জনতাকে”।তাই তো বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতার জয়গানে বাঙালীর সর্ব জনতার কণ্ঠে উদিত হয়,
হে মুজিব
বলিষ্ঠ কণ্ঠের অধিকারী তুমি
তুমি যে বিপ্লবী মহান নেতা
তোমার কন্ঠে স্বাধীনতার মহান বানী
উদিত হওয়ার ফলে
আজ হতে পেরেছি মোরা
বিশ্ব বুকে বাঙ্গালী মুক্তি কামী জনতা।
কথার মাঝে কথার রেশ ছড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা কখনো শেষ হবে না।পাক দোসরদের শোষণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সর্বদা ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠের অধিকারী।পাক শাসনের ২৩ বছরের সর্ব সময় তিনি ছিলেন আকাশ – বাতাস উতলিত কারী বিপ্লবী অধিকারবাদী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতা।১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলা আদায়ের আন্দোলন, ৬৬ এ বাঙালীর অধিকার আদায়ে বাঙালীর বাঁচার দাবি মুক্তির সনদ ছয় দফা,৬৯ এ স্বৈরচারী শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গনঅভ্যুত্থান,৭০ এ সাধারণ নির্বাচন ও সর্বশেষ ৭১ এর ৭-ই মার্চ পাক রাক্ষুসে দানবদের বিষাক্ত কালো হাত ভেঙ্গে দিতে, বাঙালী জাতিকে স্বাধীন করতে স্বাধীনতার মহা ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বাঙালী বিপ্লবী জনতাকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও অধিকার আদায়ে স্বোচ্ছার করতে পাক শাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে সর্বদা উদিত হয়েছিলো,
অধিকার আদায়ে সর্বদা স্বোচ্ছার মোরা
বিপ্লবী বাঙালী জনতা
পাক জুলুমতার বন্দি শিখল ভেঙ্গে
আজ ছিনিয়ে আনবো মানবতার শ্রেষ্ঠ বিজয়তা।
চির অমর এই ৭-ই মার্চের ভাষণ বাঙালীর জাতীয় ইতিহাসের মহা মূল্যবান দলিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। এ সম্পর্কে অধ্যাপক আমস আরোফিন সিদ্দিক বলেন, প্রতি মিনিটে গড়ে ৫৮-৬০ টি শব্দ উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটে ৭-ই মার্চের কালজয়ী ভাষণটি শেষ করেছিলেন। এক হাজার একশত সাতটি শব্দের এ ভাষনে কোনো বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি নেই,নেই কোনো বাহুল্য আছে শুধু সারকথা সারমর্ম। তবে দু-একটি স্থানে পুনরাবৃত্তি বক্তব্যের অন্তরলীন তাৎপর্যকে বেগবান করেছে। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী এই ভাষন সম্পর্কে শামসুজ্জামান খান বলেন, “কী নেই উনিশ মিনিটের এ মাস্টার পিস তুল্য ভাষণে?বাঙালী জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার ধারাবাহিক করুন ইতিহাস আছে, তা বর্ণনা করার সঙ্গে করে দেওয়া আছে আবেগ, রক্ত ঝড়ানোর করুন ইতিহাস এবং তার সঙ্গে গনতান্ত্রিক আশা-প্রত্যাশার ন্যয্যতা।আছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমূদয় মানুষের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধার প্রকাশ এবং যুক্তির জোরালো উপস্থিতি।এই সব মিলে এই ভাষন এক জগত শ্রেষ্ঠ ভাষণ”। তাইতো বঙ্গবন্ধুর জয়গানে বাঙালী বিপ্লবী জনতার কণ্ঠে চির বহমান উচ্চারিত হয়,
হে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
স্বাধীনতার শ্রেষ্ঠ মূলমন্ত্র
অধিকার আদায়ের অনুপ্রেরণা
মোরা পেয়েছি বিপ্লবী বাঙালী জনতা
তোমারই বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারিত হওয়ার ফলে
৭-ই মার্চের শ্রেষ্ঠ ভাষণতা।
৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর মহান নেতৃত্বে শতভাগ সফলতা দেখে ২৫ -ই মার্চ পাকিস্তানি জালিম সৈন্যরা ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে রাত ১১ টার দিকে বাঙালীর নিরীহ জনগণকে নির্মম ভাবে হত্যা করে এবং রাত দেড় টার দিকে বাংলার নয়নমণি বলিষ্ঠ কণ্ঠের অধিকারী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বিপ্লবী স্বাধীনতাবাদী বঙ্গবন্ধু আনুমানিক রাত ১২ টার পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে পাকিস্তান জালিমদের শোষণ নিষ্পেষণের অবসান ঘটানোর জন্য বর্তমান বিজিপি এর ওয়ারল্যাস এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে স্বাধীনতার ঘোষণা পৌঁছে দেন।বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বাণী দেশবাসীর চোখে প্রতিফলিত হওয়ার সাথে সাথে বাংলার জমিনে আকাশে- বাতাসে স্বাধীনতার তোলপাড় উঠে। বাঙালী শোষিত বঞ্চিত গণমানুষের কন্ঠে নির্ভয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের সেই অমর কবিতা উচ্চারিত হয়,
কারার এই লৌহ কপাট
ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা
যত সব বন্দি শালায়
আগুন জ্বালা
বঙ্গবন্ধুর মহা বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের আহ্বানে বাঙালী জনতা বিপ্লবী আভায় দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ৩০ লক্ষ শহিদের রক্ত ২ লক্ষ ৭৬ হাজার মা-বোনের ইজ্জত বিপ্লবী যুব সৈন্য সেনাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে বিপ্লবী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভূদয় ঘটায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে যান সেখন থেকে লন্ডনের রাজকীয় বিমানে ১০ জানুয়ারী স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন।উল্কা পিন্ডের মত ক্ষনস্থায়ী নয়,ধুমকেতুর মতো হঠাৎ আবির্ভাব নয়,বাংলার রাজনীতিক গগনে ধ্রুব নক্ষত্রের মতই কাল পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু চিরস্থায়ী আসন লাভ করে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বীজ বপন করে বহু পরিচর্যার মাধ্যমে তাকে বৃক্ষে রুপান্তর করে সোনার ফসল ফলানো একমাত্র তার দাড়াই সম্ভব হয়েছিল।
তাইতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কবির অকুন্থ বাণী,
যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা গৌরী বহমান
ততকাল রবে কৃতি তোমার
হে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।