বগুড়ার যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক জনাবা শাহনাজ বেগমের গাছের প্রতি এক অন্য রকম ভালোবাসা। তিনি চাকরির কারনে বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেছে এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় তিনি বদলিও হয়েছেন। তিনি যেখানেই কর্মসূত্রে যান না,কেন প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা কখনও কেউ দমাইতে পারেন নাই। তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন এবং অত্যান্ত চমকপ্রদ বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর কর্মস্থলেও এর কোন কমতি ছিল না। তিনি যখন বরিশাল জেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ছিলেন সেখানেও গড়ে তোলেন বাগান। এছাড়া সেখানে বাসা ভাড়া থাকা অবস্থায় দেখেন যে বাসার পাশে পতিত জমি, আর এটাই তিনি কাজে লাগান। বাসার মালিক কে বলেন যে এই জমি তে কিছু করা যায় কিনা উত্তরে মালিক জানান যে এই সব জমিতে কোন কিছুই হবে না। আর এই সুযোগে শাহনাজ বেগম জমির মালিক বলেন যেহেতু জমিটা পতিত তাই যদি তাকে কিছু করতে দেওয়া হয়। জমির মালিক তাকে বলেন দেখেন যেহেতু জমিটা পতিত আছে আপনি যা খুশি করেন। আর এতে শাহনাজ বেগম মনে মনে খুশি হন। এরপর চাকরির ডিউটি শেষ করে তিনি লেগে পড়েন জমি তৈরির কাজে।
শাহনাজ বেগম একজন সরকারি চাকরি জীবি হয়েও নিজেই লেগে পড়েন বাগান তৈরির কাজে। এ ক্ষেত্রে অনেকে অনেক কথা বললেও কারো কথায় কান না দিয়ে সেখানে তিনি ফল,ফুল ও সবজি এবং ঔষধি গাছ লাগিয়ে সফল হন। এবং তার এ কাজ দেখে অনেকে অনুপ্রানিত হয়ে তাঁরাও বাগান করতে আগ্রহী হন। এরপর ২০১৯ সালে তিনি বগুড়ায় বদলি হলে এখানেই তার এই বাগান করা এবং গাছ লাগানোর কোন ঘাততি ছিল না। চাকরির ডিউটি শেষ করার পরে কোন ভাবেই তিনি সময় অপচয় করতেন না। বগুড়া যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বারান্দায় বিভিন্ন টবে করে নানান প্রজাতির গাছ লাগান। এবং কেন্দ্রের পিছনে এগ্রিকালচার এরিয়ায় তিনি অনেক সুন্দর সবজি বাগান ও সামনের এরিয়ায় সৌন্দর্য বর্ধক নানান প্রজাতির গাছের বাগান করেন এছাড়া ক্যাম্পাসের ভিতরেও টবে ও বিভিন্ন ফেলনা বোতলে তিনি গাছ লাগান। এমনি একদিন খবর পেলাম যে তার ছাঁদ বাগান রয়েছে বগুড়া ছিলিমপুর যুব প্যালেসে।
প্রতিবেদক সুজন কুমার রাজভর জানান, শাহনাজ বেগম ও তার স্বামী আজমল হোসেন দুজনেই যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বগুড়াতে চাকরি করেন সেই সুবাদে কাছেই ছিলিমপুরে তাঁরা প্রায় দশ জন মিলে অর্থাৎ যুব অধিদপ্তর এ যারা চাকরি করেন এ রকম দশটি পরিবার মিলে এ বিল্ডিং তৈরি করেন এবং এর নামকরন করেন যুব প্যালেস। এই বিল্ডিং টি ছিলিমপুর পশ্চিমপাড়ায় অবস্থিত। এখানেও তিনি তৈরি করেছেন ছাঁদ বাগান। একদিন ছুটির দিন তাঁর এই ছাঁদ বাগান দেখতে গিয়ে দেখলাম তিনি কর্ম ব্যস্ত তাঁর ছাঁদ বাগানে। তাঁর এই বাগানে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তাঁর এই বাগানে শোভা পাচ্ছে নানান প্রজাতির ফুল, ফল,সবজি, ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক বিভিন্ন পাতা বাহারি ও ক্যাকটাস সহ অসংখ্য গাছ। এর মধ্যে রয়েছে তিন প্রজাতির পেয়ারা, বারোমাসি আম, ৭ প্রজাতির ক্যাকটাস,চায়না কমলা,ব্ল্যাক আখ,বিশেষ প্রজাতির কলা গাছ, পেঁপে, ড্রাগন ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুল এবং সবজি বনসাই ইত্যাদি চমকপ্রদ গাছ। তাঁর এই বাগানে অনেক দামী গাছ ও রয়েছে। তিনি মূলত অনেক পরিশ্রম করেন তার এই বাগানে। আর তা ছাড়া তার স্বামী আজমল হোসেন কোথাও গেলে তার এই বাগানে এর জন্য বিভিন্ন ঔষধি গাছের চারা এনে দেন তাকে।
শাহনাজ বেগম এর এই বাগানে দুইশত এর অধিক বিভিন্ন টবে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তিনি এবং তার যুব প্যালেসের অনেকেই তাঁর এই বাগানের সবজি এবং ফল খেয়েছেন এবং এটার স্বাদ ও নাকি সম্পূর্ণ আলাদা একটা মজার। এর কারন হিসেবে তিনি বলেন যে এটাতে বা তার এই বাগানে কোন প্রকার কীটনাশক বা রাসায়নিক কোন কিছু দেন নি। সম্পূর্ণ অর্গানিক। আর তাছাড়া তার বাগানে জৈব সার ছাড়া কিছু তিনি প্রয়োগ করেন নি।
সত্যি অনেক সুন্দর একটি ছাঁদ বাগান তিনি তৈরি করেছেন। কেন না আমরা যদি ছাঁদ বাগান এর দিকে নজর দিই তাহলে রাজধানী কেন্দ্রিক এটা বেশি লক্ষ্যনীয়। রাজধানীর বাইরে চোখে পড়ার মতো খুব কম। তিনি বলেন যে, গাছ লাগানো এবং বাগান করা তার শখ ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তৈরি।
তিনি কখনও কোন কিছু চাওয়া পাওয়ার আশায় এটা করেন নি। আর তাছাড়া বাজারে এখনকার সবজিতে যে পরিমাণে রাসায়নিক ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় তা আমাদের সকলের জন্য ক্ষতিকর। আর তার এই বাগান থেকে তিনি বিষ মুক্ত সবজি ও ফল সংগ্রহ করেন।
এছাড়া তার এই বাগান দেখে অনেকেই অনুপ্রানিত হয়েছে। আরো অনেকেই অনুপ্রানিত হবে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বা রাজধানীর বাইরেও যারা ছাঁদ বাগান করেছে তাদের প্রতি দেখেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজধানীতে যারা ছাঁদ বাগান করেছে তাদের ১০% কর বা ট্র্যাক্স মওকুফ করেছে এটা যদি রাজধানীর বাইরেও করেন তাহলে আরো অনেকেই ছাঁদ বাগান করতে অনুপ্রানিত হবে বলে শাহনাজ বেগম এর বিশ্বাস।
শাহনাজ বেগম মূলত প্রচার বিমুখ একজন নারী। তিনি যে কষ্ট করে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছের চারা এনে তিলে তিলে এতো বড় ছাঁদ বাগান করেছেন তা সত্যি প্রশসংনীয়।
তিনি বলেন যে ছাঁদ বাগান এর ফলে ছাঁদে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ঠান্ডা থাকে ও বিষমুক্ত সবজি এবং ফল পাওয়া যায়। আর তাছাড়া বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়া যায়। তাই যারা ছাঁদ ফাঁকা রেখেছেন তাদের প্রতি আহবান করছি আপনারা ছাঁদ বাগান করুন এবং সুস্থ থাকুন। কেন না সুস্থ দেহে সুন্দর মন।