29 C
Dhaka
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
একুশে ৭১ময়মনসিংহ বিভাগগৌরিপুরসাইলেজ তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা গৌরীপুরের শামীম

সাইলেজ তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা গৌরীপুরের শামীম

কোভিড-১৯ এর ছোবলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরে কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করে জীবিকা চালানো শামীম আলভী হয়ে পড়েন বেকার। বেকারত্বের শিকারে সংসারের খরচ যোগাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। এমন অলস সময়ে একদিন ইউটিউবে সাইলেজ (পশু খাদ্য) উৎপাদন দেখে তিনি যোগাযোগ করেন স্থানীয় উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে।
প্রাণীসম্পদ হাসপাতালের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে স্বল্প পরিসরে ভুট্টা চাষ করে কর্ন সাইলেজ উৎপাদন শুরু করে এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।
ভুট্টা উৎপাদন শুরুর দিকে কঠিন হলেও এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। নিজ উপজেলা ছাপিয়ে এখন তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে একজন সাইলেজ উদ্যেক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
জানা যায়, ২০২২ সালে উপজেলায় ১৭ একর জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা আবাদ শুরু করেন শামীম আলভী। ভুট্টার চারা জমিতে রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মাঝে ভুট্টা গাছ কর্ন সাইলেজ করার উপযোগী হয়ে ওঠে। পরে ক্ষেত থেকে ভুট্টা গাছ কেটে উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে নিজস্ব খামারে সেমি-অটোমেটিক মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করে মোড়কীকরণের মাধ্যমে ‘সাফিনা সাইলেজ’ নামে ৫০ কেজির প্রতি প্যাকেট পাইকারি সাড়ে ৫শ টাকা ও খুচরা ৬শ টাকা করে অফলাইন ও অনলাইনে বিক্রি করছেন তিনি।
গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে সাইলেজের চাহিদা থাকায় ২০২২ সালে প্রথমবার ভুট্টা চাষ করে ছয় মাসের মধ্যেই বিনিয়োগের ১২ লাখ টাকা উঠিয়ে লাভের মুখ দেখেন শামীম আলভী। এ বছর সাইলেজ উৎপাদনের জন্য ভুট্টা আবাদ করেছেন ৫০ একর জমিতে। স্থানীয় খামারিদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সারাদেশে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে সাইলেজ বিক্রি করে বিশাল অংকের টাকা আয় করছেন। তিনি বর্তমানে প্রতি মাসে ২০-২৫ টন সাইলেজ বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে ভুট্টা চাষ ও সাইলেজ খামারে ২৫ জন লোক স্থায়ীভাবে শ্রমিকের কাজ করে তাদের জীবন নির্বাহ করছে।
কেন্দুয়ার জান্নাত ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিংয়ের পরিচালক রোকন বলেন, অনেক উদ্যোক্তা পণ্যের মানের চেয়ে ব্যবসার চিন্তা করেন বেশি। তবে শামীম ব্যবসা করার চেয়ে পণ্যের (সাইলেজ) গুণগত মান ভালো রেখেছেন। তার সাইলেজের মান অত্যন্ত ভালো। এটা পশুকে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রæত খেয়ে শেষ করে ফেলে।
গৌরীপুর পৌর শহরের খামারি মীম বলেন, ‘বোরো মৌসুমে আমাদের জমিতে ধান চাষ হওয়ায়, মাঠে গরু চড়ানো সম্ভব হয় না এবং ঘাসের সংকট দেখা দেয়। এ সময় পশুর সুষম খাদ্য হিসেবে শামীমের খামার থেকে আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে সাইলেজ কিনে গরুকে খাওয়াই।’
উদ্যোক্তা শামীম আলভী বলেন, ‘করোনায় কোচিং সেন্টার বন্ধ হলে ব্যাপক অর্থ সংকটে পড়ি। তবে সাইলেজ বিক্রি করে এখন আমি স্বাবলম্বী। গত ছয় মাসে কয়েক ধাপে সাইলেজ বিক্রি করে বিনিয়োগের টাকা বাদে বেশ লাভ হয়েছে আমার।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. হারুন-অর- রশিদ বলেন, সাইলেজ মূলত সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া। এ অঞ্চলে শামীম আলভী প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টা উৎপাদনের মাধ্যমে সাইলেজ তৈরি করে অফলাইন ও অনলাইনে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন। সাইলেজ গবাদি পশুর দুধ ও মাংস বৃদ্ধি করে। তার দেখাদেখি আরও অনেক বেকার যুবক এবং উদ্যোক্তারা সাইলেজ তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

আরও পডুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

two + 17 =

- Advertisment -spot_img

সবচেয়ে পঠিত