কিশোরগঞ্জের হাওড় উপজেলায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্থায়ী অস্থায়ী মিলে ৮ থেকে ১০ টি পশু কেনা-বেচার হাট রয়েছে। প্রতিটি হাটে কোরবানির উপযোগী পশুর প্রচুর যুগান থাকলেও নেই ক্রেতার উপস্থিত। হাওড়ের কৃষকরা বোর মৌসুমে ফসল উৎপাদনে অকাল বন্যা, অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরপর কয়েক বছর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, ক্ষতি টুকু পুষিয়ে নেয়ার আশায় গবাদিপশু পালনের উপর মনোযোগী হন। হাওড়ের গৃহস্থদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে মৌসুমি গবাদিপশুর খামার। তারা ষাঁড় বাছুর ক্রয় করে তা লালনপালন করে বড় করে ঈদ মৌসুমে বিক্রি করার আশায় থাকে যাতে কিছুটা হলেও সংসারে আর্থিক সচ্ছলতার আসে। কিন্তু এবছর সে আশায়ও গুড়ে বালি।
২৪ জুন (শনিবার) ইটনা সদরের নতুন বাজারে অস্থায়ী গরুরহাটে প্রায় ১ হাজারের মতো কোরবানির উপযোগী গরু উঠলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪৭ টি। এই হাটের ইজারাদার সূত্র প্রতিনিধিকে জানান, এবছর গরুর হাটে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকলেও ক্রেতার উপস্থিত একেবারেই কম, বলা যায় বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতার উপস্থিত একেবারেই নগন্য। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের উপস্থিত একেবারে নেই বললেই চলে।
ইটনা সদরের পশ্চিমগ্রামের কৃষক ও খামারি মোঃ সিরাজ মিয়া ও তার ছেলে হাশিম মিয়া জানান, বোরোধান উৎপাদনে পরপর কয়েকবছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ষাড় গরু পালন করবো, ৪ টি ষাড় বাছুর লালনপালন করে বড় করেছি কিছু টাকাপয়সা জমানোর আশায়। হঠাৎ গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ পর্যন্ত যে বিনিয়োগ করেছি তা উঠে আসার সম্ভবনা নেই। এখন খরচের টাকাটা যদি উঠে আসে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
হাওড়ে এবছর কোরবানি দেয়ার হার নেমে যাবে অর্ধেকের আরো নিচে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার গুলোর প্রায় বৃহৎ অংশ যে কোরবানি দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে তা পশু কেনা-বেচার হাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।
নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের কয়েকজন কর্তা ব্যক্তির সাথে কোরবানির প্রসঙ্গে কথা উঠাতেই তাদের সকলেরই বিরক্তিকর স্মিথ হাসির সাথে সাফ কথা “আগে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকি”।
জেলাটির ৩ হাওর উপজেলার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর এর তথ্য অনুযায়ী ২৮৬১ টি ছোট-বড় খামার রয়েছে। এ-বছর এসব খামারের খামারিরা কোরবানির জন্য উপযোগী করে তোলা এমন গরু মহিষের সংখ্যা রয়েছে ১৮৯১৯ টি। এর মধ্যে ইটনা উপজেলায় খামার রয়েছে ৬১২ টি এসব খামারে কোরবানির উপযোগী গরু মহিষের সংখ্যা ৪৭৩২ টি, অষ্টগ্রামে রয়েছে ৯৭৩ টি খামার, তাতে কোরবানির উপযোগী গরু মহিষ রয়েছে ২৬৭৫ টি, মিঠামইনে খামারের সংখ্যা ১২৭৬ টি, কোরবানির উপযোগী গরু মহিষ রয়েছে ৩৩৯০ টি, কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গরুর সংখ্যা শতকরা ৯৮.৫০ ভাগেরও বেশি।
হাওড়ের গবাদিপশুর যে কয়টি স্থায়ী অস্থায়ী হাট রয়েছে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই হাটগুলোতে খামারি, গৃহস্থ পাইকারদের পদচারণায় মুখর হলেও সে অনুযায়ী নেই ক্রেতার উপস্থিত। যার ফলে এসব খামারিদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। যা-ও মাঝেমধ্যে দরদাম হচ্ছে তাতে তাদের খরচ উঠে আসার মতো দামও কেউ বলছে না।
ক্রেতা বলছে আগের বছরের চেয়ে কোরবানির পশুর দাম অনেক বেশি, বিক্রেতারা বলছে গরুর খাবার লালনপালনর খরচ দেড়গুণ বেড়ে গেছে। ক্রেতা বিক্রেতা দু’পক্ষেরই দাবি যদিও যৌক্তিক, তবে খামারে বিনিয়োগ কৃত অর্থ যদি উঠে না আসে, তাহলে খামারীরা আগ্রহ হারিয়ে বন্ধ করে দিবে এসব খামার। গরু মোটাতাজাকরণে যেসব খামারিরা বিনিয়োগ করেছে তারা না পারছে তাদের গরু লোকসানে বেচতে না পারছে রাখতে। ঈদের আগে এসব গরু বিক্রি করতে না পারলে ঈদের পর পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে আরো অধিকতর লোকসানের আশংকা রয়েছে বলে জানান কয়েকজন খামারি। নতুন করে পশুর খামার গড়ে তোলতে নতুন উদ্যোগক্তারাও লোকসান হওয়ার ভয়ে এ খাতে বিনিয়োগ করতে ভয় পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবছর মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর বৃহদাংশ কোরবানি পরিকল্পনা থেকে সরে আসায়, খামারি গৃহস্থরা যে লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছে তা উড়িয়ে দেয়া যায়না।